বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
নতুন ভূমি আইন ‘ভূমি অপরাধ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ ২০২৩ এ ৭ ধরণের দলিল অকার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অনিবন্ধিত দলিল, যেসব দলিলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসারের বৈধ সীল ও স্বাক্ষর নেই, অর্থাৎ সরকার কোনো রেজিস্ট্রি ফি পায়নি, সেসব দলিল আপনা আপনিই বাতিল হতে চলেছে। কারণ, বিক্রয় দলিল অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। জমি কেনার ক্ষেত্রে যদি বায়না দলিল লেখালেখি করেন, দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে জমা দিতে হবে। রেজিস্ট্রি ছাডা শুধু ষ্ট্যাম্পের উপর লেখা দলিলের কোনো আইনি মূল্য নেই। বায়না দলিল নিবন্ধনের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বিক্রয় দলিল দাখিল করতে হবে। হেবা বা দানকৃত সম্পত্তির দলিলও রেজিস্ট্রি করতে হবে।
বন্ধকী জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে। সম্পত্তির মালিকের মৃত্যুতে, তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি অবশ্যই তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ করতে হবে এবং পার্টিশন বা বন্টননামা আপোস দলিলও নিবন্ধন করতে হবে। নতুবা নিজেরা বসে আপোষ করে ষ্ট্যাম্পে লেখালেখি করে রাখলে তা ভবিষ্যতে কার্যকর করা যাবে না। একই সঙ্গে জাল সার্টিফিকেট ও নথি তৈরি করলে সেটিও বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিসের সংগ্রহ করা দলিল পুড়ে গেছে কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ধ্বংস হয়েছে কিংবা কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এ সুযোগে ভূমি অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ ও ভোগ করতে জাল সনদ ও দলিল তৈরি করে। সেই দলিল কিন্ত কার্যকর হবে না। যদি কেউ অন্যের জমির মালিকানার উদ্দেশ্যে জাল দলিল তৈরি করে তবে জাল দলিল বাতিল হয়ে যাবে। চর, নদীর পাড়ের জমি অবৈধভাবে ব্যক্তিগত জমি দখল করে ভোগ করেছেন অনেকে। এ জাতীয় দলিল বাতিল হয়ে যাবে।
আপনি যদি কারো কাছ থেকে জমি ক্রয় করে থাকেন, কিন্তু তার উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি যে অংশ পান তার চেয়ে বেশি লিখে দিয়ে থাকেন, তাহলে এ ধরনের জমির দলিল বৈধ হবে না, তা বাতিল হয়ে যাবে। আবার কিছু ধরনের দলিল আছে, যেমন পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) দলিল, উইল দলিল, প্রবেট দলিল, চুক্তিপত্র দলিল পক্ষগণ সকলের সম্মতিতে একত্রে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে ‘বাতিলকরণ দলিল’ করতে পারেন। আবার সম্পত্তি হস্তান্তরের বিভিন্ন দলিল যেমন সাব-কবলা দলিল, দানপত্র দলিল, হেবার ঘোষণাপত্র দলিল, হেবাবিল এওয়াজ দলিল ইত্যাদি দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে ‘বাতিলকরণ দলিল’ রেজিস্ট্রি করে বাতিল করা যায়। আইনগত ও যৌক্তিক কারণে এসব দলিল বাতিলের প্রয়োজন হলে আদালতে মামলা দায়ের করে বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এছাড়া উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত কওে তৈরীকৃত দলিল বাতিল বলে গণ্য হবে।
এছাড়া দলিলটি ভুল উপস্থাপন কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে করা হলে দলিল কার্যকর হবে না। নতুন আইনে দলিল বাতিলের পাশাপাশি বাতিলকৃত দলিলের মালিককে ফৌজদারি অপরাধে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। শাস্তির মধ্যে রয়েছে অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদ- ও অর্থদ-।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। ঊসধরষ: seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮